ডেস্ক রিপোর্ট : অর্থনৈতিক কর্মকা-ে পাট খাতের অংশগ্রহণ বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ খাত থেকে বড় অঙ্কের রফতানি আয়ের লক্ষ্য নিয়ে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যমান রফতানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) আদলে এ তহবিল পরিচালনা করা হবে। মাত্র ২ শতাংশ সুদে ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তারা এ তহবিল থেকে ঋণ নিতে পারবেন। এ ঋণের অর্থে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কাঁচা পাট কেনাসহ প্রয়োজনীয় সব কাঁচামাল সংগ্রহ করা যাবে। এ তহবিলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে সম্মতি দিয়েছেন। সম্মতির পর প্রয়োজীয় প্রক্রিয়া শুরু করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।
বর্তমানে ২০ হাজার কোটি টাকার ইডিএফ তহবিল রয়েছে। তবে এ তহবিল থেকে ঋণ নিতে পারেন না পাট শিল্পের উদ্যোক্তারা। মাত্র ৩ শতাংশ সুদে রফতানি খাতের তৈরি পোশাক, বস্ত্র, চামড়া, সিরামিকসহ অন্যান্য খাত এ তহবিল থেকে ঋণ সুবিধা পাচ্ছে। পাট ও পাটপণ্য রফতানিতে স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহার হওয়ায় এতদিন ইডিএফের ঋণ সুবিধায় পাটখাত অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এ কারণে ব্যাংকের সাধারণ ঋণ থেকে প্রক্রিয়া ব্যয়সহ অন্তত ১২ শতাংশ সুদে ঋণ গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। কৃষকের কাছ থেকে পাট কেনা, কাঁচাপাট রফতানিযোগ্য করার প্রক্রিয়া ও পাটপণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত কিছু কেমিকেলসহ অন্যান্য কাঁচামাল সংগ্রহে পাটশিল্পে মোটা অর্থের জোগান লাগে। এসব বিস্তারিত জানিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি লিখেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।
চিঠিতে বলা হয়, কৃষকদের উৎপাদিত কাঁচাপাট কিনে পণ্য উৎপাদন করে রফতানি করা হয়। রফতানিপণ্য হওয়া সত্ত্বেও কাঁচামাল আমদানি না করায় ইডিএফ থেকে ঋণ সহায়তা পান না পাটশিল্পের উদ্যোক্তারা। পাটশিল্পের পুনরুজ্জীবন, আধুনিকায়ন ও উন্নতমানের পাটজাত পণ্য তৈরি ও রফতানির মাধ্যমে জাতীয় আয় বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন রয়েছে। পাটপণ্য রফতানিতে শতভাগ মূল্য সংযোজন হয়ে থাকে। দেশে-বিদেশে পাটপণ্যের চাহিদা ও ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। দেশে ১৭ পণ্যে পাটের মোড়ক ব্যবহার বাধ্যতমূলক আইন করায় দেশেও পাটের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। পরিবেশবান্ধব এ শিল্পে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে
বর্তমানে ৪ কোটি মানুষ সম্পৃক্ত রয়েছেন। আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিদেশি মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। এখাতে নতুন নতুন শিল্প হচ্ছে। এসব বিবেচনায় পাট খাতকে সহযোগিতায় ইডিএফের আদলে ২ শতাংশ সুদে ১০ হাজার কোটি টাকার বিকল্প একটি স্থানীয় মুদ্রা তহবিল গঠন প্রয়োজন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, পাটের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিলের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের মাধ্যমে যে ২০০ কোটি টাকা দেওয়া হয় তা পর্যাপ্ত নয়। এর আকার বাড়িয়ে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকা করা উচিত। এ বিষয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথমবারের মতো জাতীয় পাট দিবস পালনের কর্মসূচিতে পাটপণ্যের মেলা উদ্বোধনের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ বিষয়ে অবহিত করেন প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। সে ময় প্রধানমন্ত্রী ইডিএফের বিকল্প হিসেবে এ তহবিলের বিষয়ে সম্মতি দেন। প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্ট বলেছেন, সব শিল্প রফতানিতে কাঁচামাল আমদানিতে ঋণ সুবিধা পেলে পাট কেন পাবে না। দ্রুত এ বিষয়ে প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্পী মির্জা আজম বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে তারা চিঠি পাঠিয়েছেন। তিনি যেহেতু সম্মতি দিয়েছেন, আশা করি এ তহবিল পেতে কোনো সমস্যা হবে না। এ তহবিলে পাট খাতের চেহারা পাল্টে যাবে। পোশাক, চামড়া খাতের মতোই পাটও রফতানিতে এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে এরকম তহবিলের দাবি ছিল উদ্যোক্তাদের। তবে এতদিন সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নজরে আনা হয়নি। এবার জাতীয় পাট দিবসের অনুষ্ঠানে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছেন তারা।
ইডিএফের আদলে পাট খাতের জন্য এত বড় অঙ্কের বিকল্প এ তহবিল গঠনের প্রাথমিক প্রস্তাব করে বেসরকারি খাতের পাটকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএমএ)। জানতে চাইলে সংগঠনের সচিব আবদুল বারেক খান বলেন, রফতানি খাতের উন্নয়নে কাঁচামাল সংগ্রহে ইডিএফ থেকে ঋণ দেওয়া হয়। অথচ শতভাগ মূল্য সংযোজন অর্থাৎ দেশি কাঁচামাল ব্যবহারের কারণে রফতানিমুখী পাটশিল্পকে এ তহবিল থেকে ঋণ দেওয়া হয় না। ইডিএফ অন্তর্ভুক্ত না হয়ে এর আদলে আলাদা তহবিলের ব্যবস্থা হচ্ছে কেনথ এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাধারণত ব্যাংকের সম্মতিপত্রের (এলসি) বিপরীতে হওয়ায় ইডিএফের ঋণ হয় ডলারে। কিন্তু পাটশিল্পের কাঁচামাল যেহেতু স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা হয় সে কারণে দেশি মুদ্রাই প্রয়োজন। এ কারণে ইডিএফের আদলে বিকল্প তহবিলের দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। ইডিএফ বা বিকল্প আদলে পাট খাত ঋণ পেলে পাটকলগুলো লাভজনক হবে।সূত্রঃ সমকাল