কবির হোসেন : বিশেষ প্রতিনিধি : দুই মাস না যেতেই শোকের মাসে গাজীপুরে আবারো চালু করা হয়েছে বন্ধ হওয়া সকল আবাসিক হোটেলের নামে পতিতা ব্যবসা।
দুই মাস পূর্বে গাজীপুরের আবাসিক হোটেল ব্যবসার নামে পতিতা ব্যবসাসহ বন্ধ করে দেয়া হয় জুয়ার আসর, হাউজি যাত্রাপালা, নগ্ননাচের আসরসহ অসামাজিক কার্যকলাপ।
সাহসিকতার সঙ্গে এসব অনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ করে দিয়েছিলেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ন কবির।
অবশেষে তাকেও বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে আবারো চালু করলো সেই সব আবাসিক হোটেল গুলোতে অসামাজিক কার্যকলাপ।
বাঙ্গালী জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৪২তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে যখন নানা কর্মসুচীর মধ্যে দিয়ে জেলা প্রশাসন (ডিসি) ব্যস্ত সময় পাড় করছেন ঠিক সেই সুযোগে হোটেল মালিকেরা এই দিনটি বেছে নিয়ে আবারো শুরু করে দিয়েছে অনৈতিক কর্মকান্ড।
সকল আবাসিক হোটেলের কেঁচি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি হোটেলের কক্ষে অর্ধশতাধিক রুপবতিরা মেকাপ লাগিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। এ সময় বেশ কিছু মাদক ব্যবসায়ী ও দালাল চক্রদের তৎপরতা দেখা যায়।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গাজীপুরের কোনাবাড়ির আবাসিক ড্রীমল্যান্ড, মুন, রেইনবো, অতিথি, বনভোজন, ইয়ার, মর্ডাণ, গোল্ডিন সান, চৌরাস্তা এলাকার আবাসিক হোটেল রাজমনি, প্যারাডাইসি, রাজ, এশিয়া, বিলাস, যমুনা, শাপলা, হোতাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন হোটেল রোজ বেলী ও বৈশাখীতে পরিদর্শন করে এর সত্যতা পাওয়া যায়।
দীর্ঘ দুই মাস বন্ধ থাকার পর অবাধে এসব দেহ ব্যবসা কি ভাবে চালু হলো জানতে চাইলে কোনাবাড়ি হোটেল মুন এর মালিক নাসির জানান, আগের মতোই তিনি ফোনে বেশি কথা বলাতে নারাজ। হোটেল রেইনবোর ম্যানেজার জাকির হোসেন জানান, পুলিশ প্রশাসনের কোনো ঝাঁমেলা আর নেই সেসব ব্যবস্থা করা হয়েছে । হোটেল অতিথির ম্যানেজার পলাশ জানান, আর কোনো সমস্যা নাই সব প্রশাসন ঠিকঠাক করা হয়েছে।
এর আগে জেলা প্রশাসক ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ন কবীরকে এসব হোটেলের অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে যেন অভিযান পরিচালনা না করা হয় এর জন্য রাজমনি ইন্টারন্যাশনাল নামের এক আবাসিক হোটেলের মালিক পরিচয়ে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের দাফতরিক মোবাইল নম্বরে হুমকি দেয়া হয়। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর নিজেই বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (নং-১০৫১, তাং-১৫/০৬/১৭ইং) করেছিলেন।
এর একদিন পর ১৬ জুন শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নগরীর চান্দনা চৌরাস্তার হোটেল রাজমনি ইন্টারন্যাশনাল ও হোটেল দক্ষিণ বাংলায় ওই অভিযান চালিয়ে ৬৭ তরুণ-তরুণীকে গ্রেপ্তার করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়।
গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাহেনুল ইসলামের নেতৃত্বে ওই অভিযান পরিচালনার সময় টের পেয়ে বেশ কয়েকজন তরুণ ও কর্মচারী হোটেল থেকে লাফিয়ে পড়ে পালিয়ে যায়। এসময় হোটেল দুইটির বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্নের জন্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও নির্দেশ দেয়া হয়।
এর পর ১৭ জুন শনিবার পুলিশ সিটি করপোরেশনের টঙ্গী এলাকার হলিডে, বন্ধন ও লতিফ আবাসিক হোটেল ও কোনাবাড়ি এলাকার অতিথি, ড্রিমল্যান্ড, গোলন্ডিসান, মুন, অতিথিসহ বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে ৭৬ তরুণ-তরুণীকে গ্রেপ্তার করে। এদের ৪০জন তরুণ ও ৩৬ জন তরুণী। পরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়।
তার দুই সপ্তাহ পর পুলিশ ২৯ জুন বুধবার টঙ্গীর হোটেল বন্ধু, সুন্দরবন, অনামিকাসহ কয়েকটি হোটেলে অভিযান পরিচালনা করে ৪০ জন তরুণ-তরুণীকে গ্রেপ্তার করে। এসময় অনেকে দুই তিন তলা থেকে লাফিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাদেরকে ধরে উত্তম মাধ্যম দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।
এ ছাড়াও ২৩ জুলাই রোববার রাতে শ্রীপুর থানা পুলিশ জেলার শ্রীপুর পৌর সভার মাওনা চৌরাস্তা এলাকার স্বাগতম গেস্ট হাউজ নামের একটি আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে ১১জন তরুণ-তরুণীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে।
এর আগে গত ১১এপ্রিল মঙ্গলবার অসামাজিক কার্যকলাপ চলাকালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় রয়েল, রাজ ও প্যারাডাইস আবাসিক হোটেল বোর্ডবাজারের মেট্রোরাজ ও ময়নামতি ও কোনাবাড়ীর রেইনবো, ডিমল্যান্ড ও ইয়ার আবাসিক হোটেল থেকে যৌনকর্মীসহ ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে ২৪ জন নারী ও ২৫ জন পুরুষ।
এছাড়া গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ শনিবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পূর্বপাশে গাজীপুর উপজেলার হোতাপাড়া এলাকায় রোজ বেলী ও হোটেল বৈশাখীতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন এর নেতৃত্বে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট একেএম গোলাম মোর্শেদ খান ও রাসেল মিয়া অভিযান চালিয়ে ২০জন নারীসহ ৩২জন গ্রেপ্তার করে। পরে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে প্রত্যেককে একমাস করে সাজা দেয়া হয় এবং দুইজনকে অর্থদন্ড করা হয়। অভিযান শেষে হোটেলটি সিলগালা করে পার্শ্ববর্তী হোতাপাড়া পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ এসআই নাজমুল হাসানকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। এসময় অসামাজিক কর্মকান্ডের অপরাধে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ওই হোটেলের বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশনা দেয়া হয়।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ূন কবীর এ প্রসঙ্গে বলেন, হোটেল ব্যবসার নামে এ সমস্ত অনৈতিক কাজকর্ম আমি থাকা অবস্থায় এ জেলায় হতে দিবো না। এর জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রকার আইনানুক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।