নীতিমালা ছাড়াই ফান্ড ট্রান্সফার করছে ৫৮% ব‌্যাংক

0
1902
Print Friendly, PDF & Email

ডেস্ক নিউজ : ফান্ড ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ে কোনো ধরনের নীতিমালা ছাড়াই চলছে দেশের ৫৮ শতাংশ ব্যাংক। আবার নীতিমালা অনুসরণ করলেও ৯৬ শতাংশ ব‌্যাংক অনুসরণ করছে সেকেলের পদ্ধতি।

রোববার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘ফান্ড ট্রান্সফার প্রাইসিং অব কমার্শিয়াল ব্যাংকস: স্টাটাস অ্যান্ড মেজারস ফর ইমপ্লিমেন্টিং ইন ব্যাংকস অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) ওই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ ও সেমিনারের আয়োজন করে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ৫৮ শতাংশ ব্যাংক এক শাখা থেকে আরেক শাখায় ফান্ড ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা ছাড়া কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ৬২ শতাংশ ব্যাংকের ফান্ড ট্রান্সফার প্রাইসিং হয় ম্যানুয়ালি। আবার ৯৬ শতাংশ ব্যাংক সেকেলে পদ্ধতিতে ফান্ড ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের হিসাব করছে। তবে ৪ শতাংশ ব্যাংক অনলাইন ক্যালকুলেটারের মাধ্যমে ফান্ড ট্রান্সফার কার্ভ ব্যবহার করে হিসাব-নিকাশ করছে। অন‌্যদিকে ৮৫ শতাংশ ব্যাংকের একটি নির্দিষ্ট কমিটির মাধ্যমে ফান্ড ট্রান্সফার প্রাইসিং হয়। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. আলমগীর।

সেমিনারে ‘সাসটেইনিবিলিটি রিপোর্টিং প্র্যাক্টিসেস ইন ব্যাংকস অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক আরো একটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। আর ওই প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক (গবেষণা উন্নয়ন ও কনসালটেন্সি) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জী।

এদিকে ‘সাসটেইনিবিলিটি রিপোর্টিং প্র্যাক্টিসেস ইন ব্যাংকস অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্লোবাল রিপোর্টিং ইনিশিয়েটিভস (জিআরআই) গাইড লাইন অনুসরণ করে রিপোর্টিং করে মাত্র সাতটি ব্যাংক। ৩৪টি ব্যাংক জিআরআই গাইড লাইন অনুসরণ করছে না। অবশিষ্ট ব্যাংকগুলো আংশিক জিআরআই গাইড লাইন অনুসরণ করছে। যদিও ২০১৫ সালের জুনের মধ্যে স্বাধীনভাবে সাসটেইনিবিলিটি রিপোর্ট (আইএসআর) প্রকাশ করার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এ সময়ের মধ্যে জিআরআই গাইড লাইন অনুসরণ করে প্রতিবেদন করছে মাত্র সাতটি ব্যাংক।

প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.১ শতাংশ অর্জন করেছে। যা এশিয়ার সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয়। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে উন্নয়ন এবং টেকসই পরিবেশ দুটোই একই সঙ্গে ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে ব্যাংকগুলোর সাসটেইনিবিলিটি রিপোর্টিংও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সাসটেইনিবিলিটি রিপোটিংয়ের জন্য সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তবে বিভিন্ন কারণে অধিকাংশ ব্যাংক তা করতে ব্যর্থ হয়েছে।

সেমিনারের সভাপতি বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধূরী বলেন, সরকারের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়ন করা। এ লক্ষ্য পূরণে টেকসই অর্থায়নের কোনো বিকল্প নেই। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী হাতেগোনা কয়েকটি ব্যাংক সাসটেইনিবিলিটি রিপোর্টিং করছে। তিনি বলেন, ফান্ড ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট রেট নির্ধারণ করতে হবে।

প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ কামাল খান চৌধুরী বলেন, যেসব ব্যাংক জিআরআই গাইড লাইন অনুসরণ করবে তাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। এতে ব্যাংকগুলোর জিআরআই গাইড লাইন অনুসরণে আগ্রহ বাড়বে। বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে।

সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, মোট ঋণের দশমিক ৫ শতাংশ টেকসই অর্থায়ন হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫০টি আইটেমে টেকসই অর্থায়ন করার কথা থাকলেও ১২টিতে অর্থায়ন করেছে ব্যাংক। এ চিত্র খুবই হতাশাজনক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক সাসটেইনেবল রিপোর্টিং এবং ফান্ড ট্রান্সফার প্রাইসিং নীতিমালা করার বিষয়ে কীভাবে ব্যাংকগুলোকে সহযোগিতা করা যায় তা ভেবে দেখা হচ্ছে।

শেয়ার করুন