নিউজ ডেস্ক : রাঙামাটির অনেকটা অংশই দেখে যায় সাজেক ভ্যালি থেকে। খাগড়াছড়ির বাঘাইছড়ি উপজেলা থেকে ৩০ কিলোমিটারের দুরের সাজেকের পুরোটাই পাহাড়ে মোড়ানো পথ। প্রকৃতির এই রুপ যেন রাঙামাটির ছাদ! নয়নাভিরাম অরণ্যভ‚মি আর পাহাড়ের বন্ধনে যেখানে মেঘের দল প্রেমে মেতে থাকে। ভৌগলিক অবস্থান রাঙামাটিতে হলেও যাতায়াতের সহজ পথ খাগড়াছড়ি। সাজেক ভ্রমণের শুরুটা হলো খাগড়াছড়ি দিঘীনালা থেকে, ভ্রমণযান মোটরবাইক। দিঘীনালা থেকে সড়ক পথে সাজেকের দু’তিন ঘন্টার দূরত্ব। প্রথম বিরতি বাঘাইহাট বাজারে। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে এই পাহাড়ি বাজারের পাশ দিয়ে চলে গেছে কাচালং নদী। পাহাড়ি-বাঙালির দ্বন্দের কারণে নদীর পাড়ের এই বাজার অনেকদিন ধরেই বন্ধ রয়েছে। তবুও বাজারে নেমেই এককাপ গরম চায়ে চুমুক, কুয়াশা আর শীতের সকালে কিছুটা উষ্ণতা পাবেন। কিছুক্ষণের বিরতি শেষ করে আবার চলা শুরু। রাস্তার দুপাশের বিচ্ছিন্ন পাহাড়ি ঘর। বাঘাইহাট বাজারের পর গঙ্গারাম মুখ। দুপাশ থেকে বয়ে আসা দুটি নদী এক হয়েছে এখানে। পাহাড়ের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া নদী চলে গেছে দূরের পথ ধরে। মুক্ত আকাশের নিচে বিশাল সমৃদ্ধ বনভ‚মির সন্ধান পাবেন কেবল সাজেক ভ্যালির পথে। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে জুম চাষ, কয়েক রকমের জুম চাষে ভরপুর পাহাড়। উড়োবাজার, গঙ্গারামমুথ, নন্দরাম এসব পাহাড়ি পাড়া পেরিয়ে দ্বিতীয় যাত্রা বিরতি মাচালং বাজার। পাশের সীমান্ত ঘেঁষা ভারত থেকে আসা মাচালং নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠেছে ছোটখাট বাজার। এই এলাকা সাজেক ইউনিয়নের প্রধান কেন্দ্রস্থল। আদিবাসী আর বাঙালি মিলেমিশে এই বাজারে ব্যবসা করে। দূরদূরান্তের পাহাড়িরা একদিন আগেই বাজারে আসতে শুরু করেন। মাচালং বাজার থেকে সাজেকের পথের দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার। বন্ধুর পথ দুপাশেই আকাশচুম্বী পাহাড়ের বুকে উদ্ধত শিখর তুলে দাঁড়িয়ে আছে বৃক্ষরাজি। দীর্ঘজীবি বৃক্ষের দেখা মেলে এই পথে, মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্ন বসতি। এক সময় উঁচু পথের সমাপ্তি হয়, পা রাখবেন রুইলুই পাড়ায়। এটা সাজেক উপত্যকার মূল কেন্দ্র। রুইলুই পাড়ায় লুসাই, পাংখোয়া, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বসবাস। পাড়ার সবগুলো বাড়ির রং লাল-সবুজ। রুইলুই পাড়া থেকে ২০ মিনিটের হাঁটা পথ কংলাক পাড়া। পাংখোয়াদের বসবাস এখানে। সব মিলিয়ে ১৫ পরিবারের বসবাস হবে। বিশাল পাথরখণ্ডের পাদদেশেই কংলাক পাড়ার অবস্থান। কংলাকের পাথরচ‚ড়ায় দাঁড়িয়ে পুরো সাজেক উপত্যকা চমৎকারভাবে এক নজরে দেখা যায়। পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে এখানে আকাশ ঘুমায়, পাহাড়ের বন্ধনহীন মিলন দেখা যায়। কোথাও কোথাও তুলার মতো দলছুট মেঘের স্তুপ ভেসে বেড়ায় পাহাড়ের চ‚ড়ায়, যেন স্বপ্নরাজ্য। ভোরবেলা মেঘ পায়ের কাছে হেসে লুটোপুটি খায়- নতুন দিনের অভিবাদন জানায়। হলুদ নদী, সবুজ বন, গেরুয়া পাহাড় সবটুকু অদৃশ্য হয় সাদা মেঘের আড়ালে।
যেভাবে যাবেন : প্রথমে যেতে হবে খাগড়াছড়ি অথবা দিঘীনালা। রাজধানী থেকে শান্তি পরিবহন, বিআরটিসি (এসি বাস), সেন্ট মার্টিন (এসি বাস), শ্যামলী, সৌদিয়া, ঈগল, এস.আলম পরিবহনে খাগড়াছড়ি এবং দিঘীনালায় সরাসরি যাওয়া যায়। চট্টগ্রাম থেকে প্রতি একঘণ্টা পরপর শান্তি পরিবহনের গাড়ি ছাড়ে। তাছাড়া চট্টগ্রামের লোকাল বাসেও যাওয়া যায়। খাগড়াছড়ি অথবা দিঘীনালা থেকে ভাড়ায় চাঁদের গাড়ি, সিএনজি অথবা মোটরবাইক রির্জাভ করে সাজেক ঘুরে আসতে পারবেন। সাজেক যাওয়ার পথে বাঘাইহাট জোনে আপনার নাম, ঠিকানা এবং মোবাইল নম্বর এন্ট্রি করতে হবে।
যেখানে থাকবেন : সাজেক এলাকায় থাকার জায়গা নেই। তাই রাতে থাকার জায়গা আগে থেকেই ঠিক করতে হবে। দল বড় হলে প্রস্তুতি নিতে হবে আগে থেকেই। থাকার জন্য আছে, রূনময় রির্সোট (বিজিবি পরিচালিত), সাজেক রির্সোট (সেনাবাহিনী পরিচালিত) আলোর রিসোর্ট এবং ক্লাব হাউস। সাজেকবাসীদের পরিচালিত কয়েকটি দোকানে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। তবে সেক্ষেত্রে আগেই তাদের জানাতে হবে।
প্রয়োজনীয় তথ্য : সাজেক অনেক দুর্গম জায়গা। এখানে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। যাও আছে তা মূলত সৌর বিদ্যুৎ নির্ভর। উঁচু জায়গা বলে পানীয় জলের সংকট আছে। তাই খাওয়ার পানি সঙ্গে নেয়া উচিত। আর অবশ্যই নিরাপত্তার কথা মাথায় রাখবেন। নিজের বা দলের সবার নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন থাকার জন্য সেনাবাহিনী ও বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। কোথায় যাচ্ছেন, কিভাবে যাচ্ছেন, কেথায় থাকবেন, গাইড কে?-সবকিছু ভালোভাবে জেনে-বুঝে ভ্রমণে বের হওয়া ভালো।