নিউজ ডেস্ক : ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর সাক্ষাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। এ বিষয়টি ‘নজিরবিহীন’ বলে মনে করছে দলটি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) যে ছবি আমরা দেখলাম- এই সরকারের স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী অ্যাটর্নি জেনারেলকে সঙ্গে নিয়ে, আইনমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেছেন, সভা করেছেন, বৈঠক করেছেন। বিষয়টি এই ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের ওপরে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে এই সাক্ষাৎ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে- সেটা নিঃসন্দেহে সমগ্র জাতিকে, সমগ্র মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। যেটা হওয়ার কথা নয়, নজিরবিহীন। যে রায় হয়ে গেছে, সুপ্রিম কোর্ট সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়ে দিয়েছে, সেই রায়ের বিরুদ্ধে তারা (সরকার) অবস্থান নিয়ে রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। আমরা এই ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করছে, এ অভিযোগ করে এর বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব।
বিএনপির প্রাক্তন মহাসচিব আবদুস সালাম তালুকদারের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে আবদুস সালাম তালুকদার স্মৃতি সংসদ।
আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের মন্ত্রী, সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক রাতের বেলা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কয়েক দিন আগে বৈঠক করেছেন এবং নৈশভোজ করেছেন। সরকারের মন্ত্রীরা প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করছেন, অশ্লীল-অশ্রাব্য কথা বলছেন, তাদের ছোট ছোট পাতি নেতারা প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্ট সম্পর্কে যেসমস্ত মন্তব্য করছেন তা কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় চলতে পারে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আশঙ্কা করছি যে, নতুন করে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে গণতন্ত্রর যেটুকু অবশিষ্ট আছে সেটুকু ধ্বংস করে দেওয়ার। বিচার বিভাগের ক্ষমতা হরণ করার, তার স্বাধীনতা হরণ করার যেকোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
সরকার একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য গণতন্ত্রের সমস্ত স্তম্ভগুলোকে ভেঙে দিচ্ছে, এ অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এটার বিরুদ্ধে আমাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে। এটার বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে পায়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে।’
‘আজকে শুধু বিএনপি নয়, সমস্ত রাজণৈতিক দল, সমস্ত সংগঠন, ব্যক্তি, সুশীল সমাজ সকলের এগিয়ে আসার উচিৎ বাংলাদেশকে রক্ষা করবার জন্য, তার সংবিধানকে রক্ষা করবার জন্য, তার গণতন্ত্রকে রক্ষা করবার জন্য। আজকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই অপশক্তিকে রুখতে হবে ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হবে,’ বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ক্ষমতাসীনরা রাষ্ট্রবিরোধী কার্য্কলাপের সঙ্গে জড়িত, অভিযোগ করে ভবিষ্যতে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে তাদের বিচার করা হবে বলে হুঁশিয়ার করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
‘আজকে যারা এই রাষ্ট্রকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছেন, গণতন্ত্রকে ধবংস করার ষড়যন্ত্র করছেন তাদেরকে ভবিষ্যতে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। কারণ, আপনারা রাষ্ট্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছেন, এটা নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের ভেতরে পড়ে,’ বলেন মির্জা ফখরুল।
আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, ‘কী রাষ্ট্র আপনারা (সরকার) করেছেন? যাকে বেতন দেন রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে, সেই আইন কমিশনের চেয়ারম্যান প্রকাশ্যে প্রেস ব্রিফিং করেন। যে অন্যায় তিনি করেছেন, যে শর্ট রায় দিয়েছেন তার বিচারে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপরে, ১৬ মাস পরে ওই রায় পরির্বতন করে ভিন্ন আরেকটা রায় দিয়েছেন। এটা নিঃসন্দেহে আমরা মনে করি, আইনজীবীরা মনে করেন, দিস ইজ এ ক্রিমিনাল অফেন্স। এটার জন্য তার (খায়রুল হক) বিচার হওয়া উচিৎ।’
বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদারের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন তুলে ধরে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপির বর্তমান মহাসচিব।
আবদুস সালাম তালুকদার স্মৃতি সংসদের সভাপতি অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ও সুজাত আলীর পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুজ্জামান দুদু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ফজলুল হক মিলন, কামরুজ্জামান রতন, সিরাজুল হক, এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, ওয়ারেস আলী মামুন, সাঈদুর রহমান সাঈদ, আনোয়ার হোসাইন, শফিউল বারী বাবু, নিলোফার চৌধুরী মনি, এ টি এম আবদুল বারী ড্যানি, শামসুজ্জামান মেহেদি, হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন, সাদিয়া হক, প্রয়াত সালাম তালুকদারের জামাতা এম হাসান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে প্রয়াত ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদারের স্ত্রী মাহমুদা সালাম, যুব দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবন্দ উপস্থিত ছিলেন।