ডেস্ক নিউজ : চোখ উৎপাটনের অভিযোগে আজ বৃহস্পতিবার খুলনার খালিশপুর থানার ৮ পুলিশ ও ৩ আনসার কর্মকর্তাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ পুলিশের ৮ কর্মকর্তাও রয়েছেন। বাকি ৫ জনের ৩ জন আনসার সদস্য এবং অপর দু’জন স্থানীয়।
নগরীর খালিশপুর নয়াবাটি রেললাইন বস্তি কলোনীর মো. জাকির হোসেনের স্ত্রী রেনু বেগম বাদি হয়ে আজ বৃহস্পতিবার খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিমের আমলী আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় অভিযোগে বলা হয়, দাবিকৃত দেড় লাখ টাকা না পেয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা যোগসাজসে তার ছেলে মো. শাহ জালালের দু’টি চোখ উৎপাটন করে ।
মামলায় মোট ১০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। বাদির জবানবন্দি গ্রহণ করে বিচারক শহিদুল ইসলাম আদেশের জন্য আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য্য করেছেন।
আসামিরা হচ্ছেন, খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসিম খান, এসআই রাসেল, এসআই তাপস রায়, এসআই মোরসেলিম মোল্লা, এসআই মিজান, এসআই মামুন, এসআই নূর ইসলাম ও এএসআই সৈয়দ সাহেব আলী, আনসার সদস্য (সিপাই) আফসার আলী, আনসার ল্যান্স নায়েক আবুল হোসেন, আনসার নায়েক রেজাউল এবং অপর দু’জন খালিশপুর পুরাতন যশোর রোড এলাকার সুমা আক্তার ও শিরোমনি বাদামতলা এলাকার লুৎফুর হাওলাদারের ছেলে রাসেল।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই বাদির ছেলে মো. শাহজালাল স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে নিয়ে পিরোজপুরের কাউখালি উপজেলার সুবিদপুর গ্রামের বাড়ি থেকে নগরীর নয়াবাটি রেললাইন বস্তি কলোনীর শ্বশুর বাড়িতে আসে। ওইদিন রাত ৮টায় শাহ জালাল তার শিশু কন্যার দুধ কেনার জন্য বাসার পার্শ্ববর্তী দোকানে যায়। এ সময় খালিশপুর থানার ওসি নাসিম খানের নির্দেশে কৌশলে তাকে থানায় ডেকে নেওয়া হয়। তার ফিরতে দেরি হওয়ায় খোঁজ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা থানায় গেলে ওসি তাকে ছাড়ানোর জন্য দেড় লাখ টাকা দাবি করেন। অন্যথায় তাকে জীবনে শেষ করে ফেলবে বলে হুমকি দেন।
দাবিকৃত টাকা দিতে ব্যর্থ হয়ে স্বজনরা থানার সামনে অপেক্ষা করতে থাকেন। এর মধ্যে রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ কর্মকর্তারা শাহজালালকে পুলিশের গাড়ীতে করে বাইরে নিয়ে যায়। কিন্তু তাকে রাতে আর থানায় আনা হয়নি। দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা অপেক্ষার পর স্বজনরা বাসায় ফিরে যান। পরদিন ১৯ জুলাই ভোর সাড়ে ৫টায় তারা থানায় গিয়ে জানতে পারেন শাহজালাল নামে কেউ থানায় নেই। পরবর্তীতে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন শাহজালাল খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। সেখানে গিয়ে হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ১০-১১নং ওয়ার্ডের বারান্দায় দু’টি চোখ উপড়ানো অবস্থায় তাকে দেখতে পান।
এ সময় স্ত্রী ও শাশুড়িসহ অন্যান্য সাক্ষীদের শাহজালাল জানান, পুলিশ কর্মকর্তারা হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে গাড়িতে করে গোয়ালখালি হয়ে বিশ্ব রোডের (খুলনা বাইপাস সড়ক) নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তার হাত-পা চেপে ধরে এবং মুখের মধ্যে গামছা ঢুকিয়ে স্ক্রু ডাইভ্রার দিয়ে দু’টি চোখ উপড়ে ফেলে। পরে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেখে আসে। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তার দু’টি চোখই অন্ধ হয়ে গেছে। পরবর্তীতে আসামিরা শাহজালালের বিরুদ্ধে খালিশপুর থানায় একটি ছিনতাই মামলা দায়ের করে গ্রেফতার দেখায়।
মামলায় বাদিপক্ষের আইনজীবী মো. মোমিনুল ইসলাম জানান, আদালত বাদির জবানবন্দি গ্রহণ করে আদেশের জন্য আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য্য করেছেন।