মাদক ব্যাধিতে আক্রান্ত কালিয়াকৈর: পুলিশ-প্রশাসনের রহস্য ভূমিকা!

0
4085
Print Friendly, PDF & Email

ডেস্ক নিউজ : গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার প্রত্যেকটি পাড়া-মহল্লায় যেন মাদকের মেলা বসেছে। দেখলে মনে হবে যেন পুরো কালিয়াকৈর ভাসছে মাদকে। অথচ স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন কিংবা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এদিকে কোন খেয়াল নেই। তবে পুলিশ মাঝে মধ্যে দু’একটি অভিযান পরিচালনা করে দু’একজন মাদক ব্যবসায়ীকে ধরে চালান করে দেয়। এতেই যেন পুলিশের কার্য শেষ।
সারা কালিয়াকৈরে আজ মাদকের ভয়াল রাহুগ্রাসে আক্রান্ত। কালিয়াকৈর পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড ও উপজেলার ৯টি ইউনিয়নেই চলছে রমরমা মাদক ব্যবসা। কিছুতেই এ সর্বনাশা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে আসছে না। ফলে বিপথগামী হচ্ছে তরুণ সমাজ। দুর্ভাবনায় যেন ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে অভিভাবকদের। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুলিশ প্রসাশন মাদকসহ গ্রেফতার করার পরও রহস্যজনক কারণে তাদেরকে আবার কিছু সময় পরই ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। মাঝে মধ্যে আবার দেখা যায় পুলিশ প্রসাশন মাদকসহ গ্রেফতার করলেও ৩৪ ধারায় (নন এফআইআর) তাকে আদালতে চালান দেয়া হচ্ছে। আর সহজেই বেরিয়ে এসে এরা আবার মাদক ব্যবসায় নিয়োজিত হচ্ছে।
অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে কালিয়াকৈর উপজেলায় মাদকের ভয়াল চিত্র। যেন শিউরে উঠার মত। উপজেলার রতনপুর এলাকায় মৌচাক রেল ষ্টেশন হওয়ার সুবাদে মাদক ব্যবসায়ীরা সহজেই মাদক দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সরবরাহ করে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে থাকে তাদের এজেন্ট কিংবা বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীর হাতে।
তথ্যসূত্রে জানাগেছে, উপজেলার বিভিন্ন মহল্লায় সিন্ডিকেট করে মাদক বিক্রি হচ্ছে যার প্রভাব সারা কালিয়াকৈর পেরিয়ে গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ি এলাকার কিছু অংশে। এসব সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রেনে সারা কালিয়াকৈরে রয়েছে প্রায় দুইশতাধিক ছোট বড় মাদক ব্যবসায়ী/এজেন্ট।
কোন কোন এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক বিক্রি করে থাকলেও কেউ কোন শব্দ করতে পারেনা। বেশ কিছুদিন আগে উপজেলার মৌচাক উত্তরপাড়া এলাকার শীর্ষ এক মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে এলাকাবাসি বিক্ষোভ-মিছিল ও মানব বন্ধন করেছে। কিন্তু এর পরেও রহস্যজনক কারণে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করেনি। এলাকাবাসির অভিযোগ ওই মাদক ব্যবসায়ী মানব বন্ধনের পর প্রশাসনকে ম্যানেজ করে আরো বেশী বেপরোয়া হয়ে পড়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাদকের সহজলভ্যতার কারণে উঠতি বয়সের স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা মাদকের দিকে ঝুকে পড়ছে। এতে অভিবাবকরা চরম সংকিত হয়ে পড়েছে।
আশংকাজনক হারে মাদকের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার কারণে স্কুল, কলেজগামী শিক্ষার্থী, পোশাক কারখানার শ্রমিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের যুবকেরা আজ মাদকের ভয়াল থাবায়। যার কারণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে ধর্ষন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও খুনসহ নানা ধরণের অপরাধমূলক কর্মকান্ড।
বেশ কিছুদিন আগে মাদকরে টাকা না পেয়ে উপজেলার বাঁশতলী কাচারস এলাকায় এক মাদকাসক্ত ছেলে তার নিজ মাকে কুপিয়ে খুন করে। উপজেলার সফিপুর রাখালিয়াচালা এলাকায় মাদক ব্যবসার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ সিরাজ নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করে। মাদকের কারনে সমাজে খুন-খারাপিসহ নানা প্রকার অপরাধমূলক কর্মকান্ড বেড়েই চলেছে এরপরেও পুলিশ কিংবা সংশ্লীষ্ট প্রশাসন নিচ্ছেন না কোন কার্যকরী পদক্ষেপ।
দুঃখজনক হলেও সত্য প্রত্যেক মাদক ব্যবসায়ী কোননা কোন ভাবে প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরকে মেনেজ করেই তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সমাজে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা ধাপটের সঙ্গে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অথচ প্রশাসন তাদের ধরছেনা। যদিও প্রশাসন মাঝে মধ্যে দু‘একজন মাদক ব্যবসায়ীকে ধরে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে মোটা অংকের মুক্তিপনের শর্তে তাৎক্ষনিক ছেড়ে দিচ্ছে। এছাড়া বেশির ভাগ মাদক ব্যবসায়ী প্রশাসনকে মাসিক ভাতা প্রদানের মাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের মাদক ব্যবসা।
উল্লেখ্য যে, প্রশাসন একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীকে আটক না করে মাদকসেবীকে আটক করছে। বেশির ভাগ মাদকসেবীকে আটক করার পর মোটা অংকের মুক্তিপনের শর্তে আবার সবাইকে ছেড়েও দেওয়া হচ্ছে। আটককৃতদের মধ্যে দু‘একজন যারা প্রশাসনের দাবিকৃত টাকা না দিতে পারে তাদের মাদক মামলা দিয়ে চালান দেওয়া হয়।
এদিকে, মাদকনিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর বলে কোন কিছু আছে এটা জনগন জেনেও জানেন না। অনেকে জিজ্ঞেস করে ওনাদের কাজ কি ? আসলে জনগন জানবেই বা কি করে। মাদকনিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর গাজীপুর এর আওতাধীন কালিয়াকৈর উপজেলা। যেখানে পাড়া-মহল্লায় মাদকের ছড়াছড়ি। অথচ বছরে দু‘একটি মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়েছে কিনা তা কারো জানা নেই। মোট কথা মাদক নিয়ন্ত্রনে কালিয়াকৈরে তেমন কোন প্রদক্ষেপ বা ভূমিকা তাদের নেই।
অনুসন্ধানে আরো বেড়িয়ে এসেছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নসহ পৌরসভার অধিকাংশ এলাকাতেই চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। এসব এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসি একাধিকবার প্রশাসনকে জানালেও কোন ফল পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ তাদের। তবে দু’একটি লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে দু’একজনকে গ্রেফতার করে চালান দিলেও আইনের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে ছাড়া পেয়ে পুনরায় এ ব্যবসা চালিয়ে যায়।
মাদক ব্যাধিতে সারা কালিয়াকৈর আজ আক্রান্ত। মাদকদ্রব্য নেই কালিয়াকৈরে এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কালিয়াকৈর উপজেলার প্রায় প্রতিটি মহল্লার আনাচে-কানাচে সর্বত্রই মাদকে ভরপুর। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইয়াবা, ফেনসিডিল, ইনজেক্টিং ড্রাগ, হেরোইন, গাঁজা, দেশি-বিদেশি মদ ও বিয়ারের ভয়াল প্রভাবে তরুণ প্রজন্ম মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। আর এসব মাদকের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ইয়াবা।
এব্যাপারে কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, মাদকের ব্যাপারে কোন আপোষ নেই। মাদক নিয়ন্ত্রনের বিষয়টি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। এছাড়া মাদক ব্যবসায়ী সে যেই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে যথাযত আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
গাজীপুর মাদকনিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ নাসির উল্লাহ ভুইয়া জানান, আমরা মাঝে মাঝেই মাদক নিয়ন্ত্রনে জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছি। এছাড়া মাদকের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ভাবে কেউ তথ্য দিলে আমরা তা নিয়ন্ত্রনে কাজ করে যাচ্ছি।
তবে উল্লেখযোগ্য ভাবে মাদকনিয়ন্ত্রনে অভিযান পরিচালিত না হওয়ার কারন হিসেবে তিনি জানিয়েছেন, প্রয়োজনের তুলনায় এ অধিদপ্তরের জনবল একেবারে নগ্ন/কম। এছাড়া মাদক নিয়ন্ত্রনে দ্রুত ও কার্যকর ভুমিকা রাখার জন্য মাদকনিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের জন্য পরিবহন সুবিধা যা থাকার কথা তা পাচ্ছেন না তারা।

শেয়ার করুন