ডেস্ক নিউজ : ক্ষমতার দ্বন্দ্বে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের মতবিরোধ দিনকে দিন বাড়ছেই। দীর্ঘদিনের এ বিরোধ এখন থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে গিয়ে প্রকাশ্যে রূপ নিচ্ছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রের দায়িত্বশীলদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
.
তবে কেন্দ্রের দায়িত্বশীলরা বলছেন, সাংগঠনিকভাবে এখানে বড় ধরনের কোন মতবিরোধ নেই। আর সাংগঠনিক অভিযোগ ছাড়া হস্তক্ষেপ করলে মতবিরোধ আরও উস্কে দেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র নির্বাচনের সময় থেকেই বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন ও দক্ষিণের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। দু’জনই দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদে আসার পর নিজেদের বলয় আরও শক্ত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
শাহে আলম মুরাদের অনুসারিরা বলছেন, নগর ভবনকে কেন্দ্র করে সাঈদ খোকন দলের সমান্তরাল পাল্টা বিভিন্ন কর্মসূচি নিচ্ছেন।
আর সাঈদ খোকনের অনুসারিদের অভিযোগ, দলীয় কর্মসূচিতে মুরাদের প্রভাবে সাঈদ খোকনকে কোণঠাসা করে রাখা হচ্ছে। প্রভাব বিস্তার নিয়ে এই দুই নেতার পাল্টাপাল্টি অবস্থানের পাশাপাশি ব্যক্তিগত স্বার্থের নানা অভিযোগও রয়েছে।
তবে সম্প্রতি নগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে সাঈদ খোকন আর মুরাদের মতবিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে।
গত সপ্তাহে মগবাজার-মৌচাক ফাইওভার উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিকনফারেন্সে থাকা অবস্থায় মারামারি ও ভাংচুরে জড়িয়ে পড়ে দুই নেতার অনুসারিরা।
সর্বশেষ গত (০১নভেম্বর) বুধবার দলের বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই হাতাহাতি ও ভাংচুরে লিপ্ত হন তারা।
দক্ষিণের বিভিন্ন পর্যায়ের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন এবং কমিটিতে দু’পক্ষই নিজেদের লোক ঢুকানোর চেষ্টায় সক্রিয় রয়েছেন বলেই মতবিরোধটা প্রকাশ্যে এসেছে।
ফলে ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল কেবল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দিয়ে গঠন করা থানা, ওয়ার্ড, ইউনিয়নগুলোর কমিটি এখনঅব্দি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। অথচ গত ২ জানুয়ারি দ্রুত এসব কমিটি ঘোষণার নির্দেশ দিয়েছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এরপরও কমিটি না হওয়ায় গত ৮ মে ওবায়দুল কাদের বৈঠক করে ৩০ মে’র মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। পরে গত ২২ মে দক্ষিণের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমি আরও একদিন বাড়িয়ে ৩১ মে পর্যন্ত সময় দিলাম, আপনারা এর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে জমা দিবেন।’
তবে দলীয় সাধারণ সম্পাদকের এই নির্দেশ এখরও বাস্তবায়ন হয়নি। দুই নেতার দ্বন্দ্বে দক্ষিণের রাজনীতিতে বিশৃঙ্খলা ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রাডো পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘তারা দু’জন কী চাচ্ছেন, কেন এমন করছেন তা বুঝতে পারছি না। দু’জনকেই প্রধানমন্ত্রী দুটো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন। এরপরও কেন তারা এমন করবেন?’
দ্বন্দ্ব নিরসনে কেন্দ্র থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ আমরা দেখিনি।’
এদিকে, দক্ষিণের সভাপতি হাজি আবুল হাসনাতের অবস্থান শক্তিশালী না হওয়া এবং ঢাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ঢাকার রাজনীতিতে অপেক্ষাকৃত নবীন হওয়ায় দ্বন্দ্ব নিরসনে এই দুই নেতার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন দক্ষিণের দায়িত্বশীল এক নেতা।
তিনি বলেন, এখানে সংকট তো আছেই, সে কারণেই এসব চলছে। আর নিয়ন্ত্রণ যাদের করা দরকার তারা তো কিছু করছেন না। তবে এটি দ্রুত বন্ধ হওয়া উচিত।
ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজি আবুল হাসনাতের বক্তব্যেও একই চিত্র উঠে এসেছে।
দ্বন্দ্ব নিরসনে কেন্দ্রের ভূমিকার বিষয়ে পরিবর্তন ডটকমকে তিনি বলেন, ‘নওফেল চিটাগাংয়ের পোলা, এখানে কি করবে?’
আবুল হাসনাত বলেন, ‘ঘটনা আমি নিজেই বুঝতেছি না। কিছু গণ্ডগোল আছে, তবে কেন লাগতেছে বলতে পারব না। আশা করছি, কিছু দিনের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’
তবে এসব নিয়ে দক্ষিণের সভাপতিসহ কেউই কখনও অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
পরিবর্তন ডটকমকে তিনি বলেন, ‘আজকে গণ্ডগোল হলো, দু’দিন আগে মারামারি হলো- এটাকে দ্বন্দ্ব কিভাবে বলা হয়? ওইদিন মঞ্চে ওঠা নিয়ে যা হয়েছে, তা হতেই পারে। আর বর্ধিত সভায় তর্কাতর্কি হয়েছে। এসব ঘটনাকে সাংগঠনিকভাবে বিশাল বিভেদের প্রকাশ বলে আমি মনে করি না।’
নওফেল বলেন, ‘এসব ছোট জিনিস। মনে হচ্ছে, অন্য কারও ইন্ধন রয়েছে এসবকে বড় করে দেখানোর জন্য। আর মেয়র ও শাহ আলমের দ্বন্দ্ব যেটা, সেটা তো পার্টির দ্বন্দ্ব না। এখানে সভাপতি-সেক্রেটারির কোনো দ্বন্দ্ব নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেয়র সভা ডাকছিলেন, সেটা নিয়ে কথা হইছে। কিন্তু, এখানে সাংগঠনিক বিভেদ আছে, কেউ বলেননি।’
নিজের ভূমিকার বিষয়ে এই নেতা বলেন, ‘কেউ অভিযোগ করেনি, এখানে সাংগঠনিক বিরোধ আছে। ফলে আমি অযাচিত হয়ে বলতে পারি না, আপনাদের মধ্যে বিরোধ আছে। আমি তো আগে অনেক প্রোগ্রামে গেছি তাদের, কখনও কোনো ইনসিডেন্ট হয়নি।’
নওফেল জানান, ওয়ার্ড কমিটি জমা পড়ছে। এটা নিয়ে কোনো অভিযোগ আসলে দিতে পারে। একটা সাংগঠনিক প্রক্রিয়া আছে, তারা দপ্তরে অভিযোগ দিবে। তখন দপ্তর সাংগঠনিক সম্পাদককে বলবে, এরপর অ্যাকশন হবে।
তিনি আরও জানান, যারা দলের সাংগঠনিক কাজ করেন, তারা মারামারি-বিভেদ করেন না। কেউ করে থাকলে তাতে ব্যক্তিগত-ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িত, সেজন্য ক্ষোভ প্রকাশ ও ঝগড়া করতে পারে। কিন্তু, নেত্রীর অর্জনকে এগিয়ে নিতে সবাইকে একত্রিত হয়েই কাজ করতে হবে।