মোশারফ হোসাইন তযু-নিজস্ব প্রতিবেদক : গাজীপুরের শ্রীপুরে সবচেয়ে প্রাচীনতম বড় বাজার হচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ঘেঁষা বরমী বাজার । বহুকাল পূর্বে থেকেই উত্তর অঞ্চলের মানুষের কাছে পরিচিত এক বাজার বরমী। ঐতিহ্যবাহী এ বাজারে কয়েক’শ বছর ধরে হাজার হাজার বানরের বাস। আগে এ বাজারের চারপাশে গভীর জঙ্গল থাকায় বানর বসবাসের পরিবেশ ছিল অনুকুলে। জনবসতি গড়ে উঠলেও এখানকার বানর স্থান পরিবর্তন করেনি। মানুষ বসবাসের পাশা-পাশি বানরের অবস্থান যেন প্রকৃতির আরেক নতুন সংযোজন। কিন্ত নগরায়ন ও খাদ্য সংকটে এদের সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও ঐতিহ্যগত সৌন্দর্য হারাতে বসেছে ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে থাকা প্রাকৃতিক বন্যপ্রাণীর বসতি বরমী বাজার। এনিয়ে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে ‘‘ খাদ্য সংকটে বরমীর বানর’’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এবং বরমী ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল হক বাদল সরকার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর আবেদন করলে বিষয়টি তার নজরে আসে।
তার পরিপ্রেক্ষিতেই ইউএনও গাজীপুর জেলা প্রশাসকের বরাবর আবেদন করেন। সম্প্রতি জেলা প্রশাসক ড.দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বানরের খাবার কেনার জন্য ৫টন চাল বরাদ্দ দিয়েছেন যার মূল্য ১লাখ ৭৬হাজার টাকা। এই বরাদ্দ দিয়ে সপ্তাহে ২দিন ৫শ বানরকে একটি কলা ও ১টি রুটি খাওয়ানো যাবে। এবং মঙ্গলবার (৩১অক্টোবর) বরমী ইউনিয়নের পাঠানটেক গ্রামে বানরের জন্য খাবার দেওয়ার কর্মসূচী উদ্বোধন করা হয়। সেখানে শত শত বানর এসে জড়ো হয়। উপজেলা প্রশাসনের বরাদ্দকৃত রুটি ও কলা অনুষ্ঠান স্থলে আনা মাত্রই বানরের দৌড়ঝাপ শুরু করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল হক বাদল সরকার নিজ হাতে খাবার দিয়ে এই কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এ সময় মাঠে চার দিক থেকে আরও শত শত বানর দৌড়ে উপস্থিত হতে দেখা যায়।
বরমী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল হক বাদল সরকার জানান, দীর্ঘদিন ধরে বানরেরা খাদ্য সংকটে ভোগছে। যার ফলে বানরেরা বরমী বাজারসহ এলাকার বিভিন্ন দোকানপাট, ঘর বাড়িতে খাবারের জন্য হামলা করে। বাসা-বাড়ি থেকে খাবার চুরি করে নিয়ে যায়। রাতে মানুষজন ঘুমাতে পারেনা। রাস্তায় চলাচলে অসুবিধা সৃষ্টি করে। স্থানীয়ভাবে মাঝে মাঝে এদের খাবার দেওয়া হতো। কিন্ত অল্প খাবারে বানরের কিছুই হতো না। এবার সরকারি উদ্যোগে খাদ্য পাচ্ছে এরা। দৈনিক সমকাল, প্রথম আলো, দৈনিক খবরপত্র ও জনপ্রিয় অনলাইন সময়ের কন্ঠস্বরে এদের খাদ্য সংকটের কথা উঠে এসেছিল অনেকবার। খাদ্য না পাওয়ায় বানরেরা অনেক সময় স্থানীয়দের বাড়িতে ঢুকে বিভিন্ন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করতো। কারও কারও বাড়ি থেকে ব্যবহার্য জিনিষপত্র নিয়ে খাবারের বিনিময়ে তা ফেরত দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতো। এখন আমার উদ্যোগে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় খাবারের ব্যবস্থা করায় এলকাবাসী বানরের অত্যাচার থেকে রক্ষা পেল। বরমী বাজার ও আশপাশ মিলিয়ে বর্তমানে বানরের সঠিক সংখ্যা জানা নেই তবে গত ৫বছরে আশংকাজনক হারে বানর কমে গেছে। খাবারের ব্যবস্থা ও অশান্ত বানরদের শান্ত করায় গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড.দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেহেনা আকতারকে ধন্যবাদ জানান ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল হক বাদল সরকার।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনা আকতার বলেন, বানরের খাদ্য সংকটের কথা আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যম ও বরমী ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে শুনেছি। তার পরিপ্রেক্ষিতেই গাজীপুর জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। সম্প্রতি জেলা প্রশাসক ড.দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বানরের খাবার কেনার জন্য ৫টন চাল বরাদ্দ দিয়েছেন যার মূল্য ১লাখ ৭৬হাজার টাকা। এই বরাদ্দ দিয়ে সপ্তাহে ২দিন ৫শ বানরকে একটি কলা ও ১টি বনরুটি খাওয়াতে পারবে। তা ছাড়া বরমী বাজার ও এর আশপাশে খালি জায়গায় বানরের খাবার উপযোগী ফল গাছ রোপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগে এই বানর রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ এদের খাবার যোগান দেওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা শ্রীপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বরমী ইউনিয়ন পরিষদকে সার্বিক সহযাগিতা করবো। এবং বরমী বাজারের তিনটি স্পটে এই খাবার বিতরণ করা হবে।
বুধবার (১ নভেম্বর) সকালে বরমী ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, বরমী বাজারের দোকানদার ও এলাকার শত শত বানরের অত্যাচারে অতিষ্ট মানুষজন ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল হক বাদল সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে জড়ো হয়। এবং মিষ্টি বিতরণ করেন। স্থানীয়দের সাথে কথা বললে তারা জানান, বরমীর অনাহারী বানরের অত্যাচারে অতিষ্ট ছিলাম আমরা। ক্ষুধার তাড়নায় ক্লান্ত বানরেরা আমাদের উপর হামলা করতো। বাজার থেকে মাথায় করে কোন খাবার নিয়ে যাওয়ার সময় তা ছিনিয়ে নিতো। রাতে ঘরের উপর হামলা করতো। এক ঘর থেকে অন্য ঘরের উপর চালে লাফালাফি করতো। ঘুমাতে পারতামনা। বরমী ইউপি চেয়ারম্যানের উদ্যোগে ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অস্থির বানরদের খাবার ব্যবস্থা করে শান্ত করায় আমরা অনেক খুশী। উপজেলা প্রশাসন ও ইউপি চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানিয়েছে এলাকাবাসী।