আলমগীর হোসেন : গাজীপুরের কালিয়াকৈরে এক কালের প্রমত্তা বংশী নদী নাব্যতা হারিয়ে জবর দখলের কারণে এখন সরু খালে পরিণত হয়েছে। নদীর তীরবর্তী বহু সেচ প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে। নদীর জমিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ঘরবাড়ি ও ইটভাটাসহ শতশত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় প্রভাবশালী মহল অবৈধভাবে নদীর বুক ভরাট করে চাষাবাদ করছে। সুযোগ বুঝে স্থানীয় ঠিকাদাররা নদী থেকে নির্বিঘ্নে লাখ, লাখ টাকার মাটি কেটে নিয়ে কল-কারখানায় পাচার করছে। রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
তথ্য অনুসন্ধানে জানাযায়, বংশী নদী পুরাতন ব্রক্ষপুত্রের শাখা নদী। এর দৈর্ঘ মোট ২৩৮ কিলোমিটার। নদীটি জামালপুর জেলার শরীফপুর ইউনিয়ন অংশে প্রবাহিত পুরাতন ব্রক্ষপুত্র নদ থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণে টাঙ্গাইল ও গাজীপুর জেলা অতিক্রম করে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীটি সাভারের কর্ণতলী নদীর সাথে মিলে কিছুদুর প্রবাহিত হয়ে আমিন বাজারে এসে তুরাগ নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। তুরাগ নদী আরো কিছুদূর প্রবাহিত হয়ে মিশেছে বুড়িগঙ্গায়। এই নদী চারটি জেলা যথাক্রমে জামালপুর, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও ঢাকা এবং ১০টি উপজেলা যথাক্রমে জামালপুর সদর, মধুপুর, ঘাটাইল, কালিহাতি, বাসাইল, মির্জাপুর, সখিপুর, কালিয়াকৈর, ধামরাই, সাভার এবং ৩২১টি মৌজার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এককালের প্রমত্তা বংশী নদীর কালিয়াকৈর উপজেলার উত্তর হিজলতলী থেকে ধামরাই পর্যন্ত গতি পথের প্রায় ২০ কিলোমিটারই নাব্যতা হারিয়ে সরু খালে পরিণত হয়েছে। দুই দশক পুর্বেও কালিয়াকৈর থেকে ধামরাই ত্রিমোহনা পর্যন্ত নদী পথের দু’ধারে শতাধিক সেচ প্রকল্প চালু ছিল। উপজেলার উত্তর হিজলতলী, বড়ইতলী, নয়ানগর, বাজহিজলতলী, বলিয়াদী, ডুবাইল ও বেগুনবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় নদীর জমি জবর দখল করে অবৈধভাবে ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করায় এর পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় ওই সব সেচ প্রকল্পের হাজার হাজার বিঘা বোর ও সবজি চাষের জমিতে সেচ সুবিধা বন্ধ হয়ে গেছে।
বংশী নদীর ২০ কিলোমিটার গতি পথের শতকরা ৫০ ভাগ জায়গায়ই এখন বেদখল হয়ে পড়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ভরাট হওয়া বংশী নদীর বেশির ভাগ জায়গাতেই ঘর-বাড়ি ও ইটভাটাসহ শতশত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করছে। সরকারী ভাবে কাউকে লিজ দেয়া না হলেও স্থানীয় প্রভাবশালীরা জোর যার মুল্লুক তার নীতিতে নদীর বুক ভরাট করে হাজার হাজার বিঘা জমি দখল করে সম্পুর্ণ অবৈধভাবে চাষাবাদ করছে। সুযোগ বুঝে স্থানীয় ঠিকাদাররা নদী থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকার মাটি নির্বিঘ্নে কেটে নিয়ে বিভিন্ন কল-কারখানায় পাচার করছে। রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। বংশী নদীর চরাঞ্চল ও তীর মেপে পিলার বসিয়ে দখলকৃত জমি সরকারী দখলে নিয়ে নদীটি খনন করার জন্য এলাকাবাসী জোর দাবী জানিয়েছে।
নদীটি খনন করা হলে বার মাস এই নদী পথে মালামাল সংক্ষিপ্ত সময়ে রাজধানী সহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে প্রেরণ ও আনয়ন সহজতর হবে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজট কমবে। এছাড়া সেচ প্রকল্প ভূক্ত জমি পুনরায় চাষের আওতায় আসতে পারবে। দেশের ফসল, ও মাছ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
এব্যাপারে কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, সরজমিন তদন্ত করে বংশী নদী থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। সেই সাথে বংশী নদী খননের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।