গাজীপুরে নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগ, মামলার বোঝা নিয়ে এলাকা ছাড়া বিএনপি

0
1561
Print Friendly, PDF & Email

ডেস্ক নিউজ : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে গাজীপুরের ৫টি আসনেই আওয়ামী লীগ নেতারা গণসংযোগ, শোডাউনসহ নানা ধরনের প্রচার প্রচারনায় ব্যস্ত । এছাড়া নির্বাচনী সভা-সমাবেশ, কেন্দ্রীয় ও জেলা আঞ্চিল কমিটি গঠনসহ নানাভাবে মাঠ গুছিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ । তারা শিডিউল করে নানাভাবে, নানা কৌশলে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঠে নামাচ্ছেন । এক কথায় সংসদীয় সবকটি আসনেই নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন গুলির সকল নেতৃবৃন্দ।

অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী বেশির ভাগ নেতৃবৃন্দসহ দলীয় অনেক নেতাকর্মীরা একের পর এক মামলায় জর্জরিত হয়ে, মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে, গ্রেপ্তার আতংকে এলাকা ছাড়া । বিএনপির অভিযোগ পুলিশ প্রশাসনের মা্ধ্যমে সরকারের দমন নীতির কারণে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে তারা সাধারণ জনগণের কাছে যেতে পারছেন না। আগামী নির্বাচনের বিষয়ে এখনো দলীয় কোন সিদ্ধান্ত না থাকায় দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা আওয়ামী লীগ নেতাদের মতো পোস্টার বিলবোর্ড, ফেস্টুন লাগিয়ে নির্বাচনী গনসংযোগ, জনসভা কিংবা শো ডাউনের মতো কোন কর্মসূচি দিতে পারছেন না।

গাজীপুর সিটি ও জেলার প্রাণকেন্দ্রের নির্বাচনী আসন গাজীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন অনেকটাই চূড়ান্ত। তিনি হলেন, জনপ্রিয় এমপি শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে বর্তমান সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল।

তিনি শিডিউল করে ওয়ার্ডে, ওয়ার্ডে নির্বাচনী মতবিনিময় সভা করছেন। আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে ভোট কেন্দ্র কমিটি করছেন। তার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র সড়ক-মহাসড়কের মোড়ে মোড়ে, বাজারে, স্টেশনে ঝুলছে। অন্যদিকে, এই আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান প্রায় দু’বছর জেল খেটে এখন ৩০টি মামলা মাথায় নিয়ে এবং শারীরিক অসুস্থতায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন ঢাকায়।

আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক হাসান উদ্দিন সরকারের নামেও মামলা আছে তিনটি। শারীরিকভাবে সুস্থ নন তিনিও। কয়েক মাস আগে একবার জেল খেটে এখন সাবধানে, শতর্কতায় পা ফেলার চেষ্টা করেন। এই আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি ও জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকারের নামে টঙ্গী ও জয়দেবপুর থানায় ৭টি, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সোহরাব উদ্দীনের নামে তিনটি এবং ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য জেলা যুগ্ম সম্পাদক ডা. মাজহারুল আলমও ৯টি মামলার আসামি। একদিকে মামলায় জর্জড়িত অন্যদিকে আরো মামলায় আসামি ও গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে তৃণমূলে নিজেদের তেমন একটা সম্পৃক্ত করতে পারছেন না তারা।

গাজীপুর-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সংসদীয় বিভিন্ন কাজে ঢাকায় থাকলেও নির্বাচনী এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে তার। নির্বাচনী এলাকাগুলোতেও ঘুরে দেখা যাচ্ছে তাকে সৌজন্য করে নেতাকর্মীরা দিয়েছে বিভিন্ন পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন । আওয়ামী লীগের অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কামাল উদ্দিন শিকদার, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম রাসেল, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম বাবুল নিজেদের মনোনয়ন প্রত্যাশী ঘোষণা দিয়ে এরই মাঝে কর্মিসভা, মিলাদ ও বিশেষ দোয়া মাহফিল, মোটরসাইকেল বহর নিয়ে শোডাউন, গণসংযোগসহ নানাভবে নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন।

অন্যদিকে, এই আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুলের নামে বিভিন্ন থানায় মামলা আছে কমপক্ষে ৭টি । সর্বশেষ গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে জয়দেবপুর থানায় পুলিশের দায়ের করা একটি মামলায় পড়েছেন ছেলেকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে সিঙ্গাপুর থাকাকালে। এই আসনের বিএনপির প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য শ্রমিক নেতা হুমায়ূন কবির খান গুলশানসহ চার থানায় ৩১টি মামলার আসামি। গুলশান থানার একটি মামলায় তিনি বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আসামি হয়েছেন। সম্ভাব্য প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য কালিয়াকৈর পৌর মেয়র মজিবুর রহমান ২ থানায় ৩টি মামলার আসামি। অপর সম্ভাব্য প্রার্থী সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সুরুজ আহম্মেদ ১৫টি মামলার আসামি। প্রার্থী হিসেবে প্রচারের জন্য তার পোস্টার ছাপানো আছে, তবু তা ছাড়া হচ্ছে না বেগম খালেদা জিয়া জেলে থাকাসহ নানা কারণে।

গাজীপুর-৩ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট রহমত আলী। শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেও নিজেকে এলাকাবাসীর মাঝে সম্পৃক্ত রাখার চেষ্টা করছেন। আবার অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে দিচ্ছেন তার ছেলে কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জামিল হাসান দুর্জয়কে। এমপি প্রার্থী হিসেবে দুর্জয়ের নির্বাচনী বিলবোর্ড, পোস্টারে ছেয়ে গেছে এলাকা। অনেক তোরণ রয়েছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে। শিডিউল করে নিয়মিত উন্নয়ন তৃণমূল সভা, গণসংযোগ আর শোডাউন করছেন। পিছিয়ে নেই জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজও। সড়ক জুড়ে তার বিলবোর্ড, পোস্টার ও তোরণের কমতি নেই। এলাকায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন উঠান বৈঠকের মাধ্যমে। তৃণমূলে তুলে ধরছেন সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। এই দুজন নেতাকেন্দ্রিক আওয়ামী লীগে দুটি বলয় গড়ে উঠেছে। অন্যদিকে, এই আসনের বিএনপির প্রার্থীরা নেই নির্বাচনী মাঠে। বিএনপির প্রার্থী জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন সবুজ ৯টি, কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পীরজাদা এসএম রুহুল আমীন ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আব্দুল মোতালেব ১টি মামলা, উপজেলা বিএনপি সভাপতি শাহজাহান ফকির ৩টি মামলার আসামি।

গাজীপুর-৪ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী বর্তমান এমপি প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডাকসুর সাবেক ভিপি আক্তারুজ্জামানের পোস্টার, বিলবোর্ড এলাকায় রয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে। নিজেরাও মাঠে আছেন, গণসংযোগসহ নানা কর্মসূচি দিয়ে।

এলাকায় নেই এই আসনের বিএনপির প্রার্থী জেলা বিএনপির সভাপতি দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন। তিনি জানান, গাজীপুর ও ঢাকার বিভিন্ন থানায় এই সরকারের আমলে তিনি ৩৩টি রাজনৈতিক মামলার আসামি হয়েছেন। শুধু তিনি নন, জেলার সব উপজেলায় ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা পর্যন্ত, এমনকি দলের সমর্থকরা পর্যন্ত সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে সাজানো মামলার আসামি হয়েছেন। গণতন্ত্রে অবিশ্বাসী সরকার আবারো বিনা ভোটে সরকারে থাকার উদ্দেশ্যে তাদের কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে দিচ্ছে না। পুলিশি হয়রানি, মামলা-হামলার কারণে তিনি এলাকায় যেতে পারছেন না। গত ১০ বছর ধরে স্বাধীনভাবে দলীয় কোনো কর্মসূচি করতে পারছেন না। তিনি বলেন, অবাধ নির্বাচন হলে জনগণ এসবের জবাব ঠিকই দেবেন।

গাজীপুর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান এমপি বঙ্গতাজ তাজ উদ্দিন আহমেদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি ও তার ফুফাতো ভাই আলম আহমেদের নির্বাচনী পোস্টার, ফ্যাস্টুন, তোরণ রয়েছে এলাকায়। ঢাকায় বসবাস করলেও উন্নয়নসহ নানা কর্মসূচিতেই নিয়মিত এলাকাবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং নির্বাচন সামনে রেখে যোগাযোগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন সিমিন হোসেন রিমি। আওয়ামী লীগের রিমি এমপি’র বিরোধীরা কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা আলম আহমেদের পক্ষে রয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে। আলম আহমেদের পক্ষে তিনি নিজে ছাড়াও কৃষকলীগ কেন্দ্রীয় সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লার নেতৃত্বে মাঝে মাঝেই শোডাউন করছেন। কৃষকলীগের ব্যানারে উন্নয়ন প্রচার সভা, কৃষক সমাবেশ, খেলা-ধুলাসহ নানা কর্মসূচি দিয়ে মনোয়ন প্রত্যাশী হয়ে তারাও নিয়মিত আছেন নির্বাচনী মাঠে।

ইতিপুর্বে এই আসনে আওয়ামী লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ। জীবিতকালে বহুবার কারাবাস করে ও কয়েকটি মামলা মাথায় নিয়ে বছরখানেক আগে তিনি চলে যান নাফেরার দেশে । এই আসনে এখন বিএনপির মূল প্রার্থী প্রয়াত হান্নান শাহ’র ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান। রিয়াজুল হান্নান আগে মামলায় না পড়লেও সম্প্রতি জেলা শহরের দলীয় একটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহনের মধ্যদিয়ে তার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করেন। পরে জয়দেবপুর থানায় পুলিশের দেয়া বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলায় আসামি হয়েছেন তিনি।

তিনি জানান, সরকার ও প্রশাসনের নানা দমন, নিপীড়নমূলক ভূমিকায়, নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে শুধু মাত্র বিয়ে ও জানাজার নামাজের মতো কিছু সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এলাকায় যেতে পারেন। বর্তমানে তাদের দলীয় ২০ জন লোকও একসঙ্গে জড়ো হতে পারেন না, পুলিশি বাধা কিংবা গ্রেপ্তার আতঙ্কে। তবে দল নির্বাচনে গেলে তাদেরও সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে এবং জনগণ তাদের ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে আছেন বলেও তিনি জানান।

সূত্র: মানবজমিন এবং তথ্যসূত্র

শেয়ার করুন