গোবিন্দগঞ্জে সংখ্যালঘুর জমি জবর দখল করে বহুতল ভবন নির্মান করার অভিযোগ

0
1755
Print Friendly, PDF & Email

গাইবান্ধা ঘুরে বিশেষ প্রতিবেদন : গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাবাড়ী ইউনিয়নে সংঘবদ্ধ একটি ভুমিদস্যু চক্রের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে রেকর্ডিয় সম্পত্তি জবর দখল করে বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মানের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ ও সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার কাটাবাড়ী ইউনিয়নের হিলালী পাড়া এলাকায় স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধ ভুমিদস্যু চক্রের বিরুদ্ধে সহজ, সরল ও নিরীহ সংখ্যালঘু আদিবাসী সাওতালদের বৈধ সম্পত্তি অবৈধভাবে জবর দখল করে ঘর-বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মান করার অভিযোগ রয়েছে। ওই এলাকায় যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে অত্যাচার ও অবৈধ পন্থায় ভুমি জবর দখল করে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের মধ্যে- মোঃ সাইফুল ইসলাম তিনি হিলালী পাড়া এলাকার মৃত তছের খাঁর ছেলে, মোঃ নুরুল ইসলাম তিনি মৃত. রইস উদ্দিন প্রামাণিক এর ছেলে, মোঃ জাহাঙ্গীর মিয়া ও আব্দুস সালাম তারা দুই ভাই একই এলাকার ইয়ার মামুদ ব্যাপারীর ছেলে। এছাড়া আনোয়ার মাষ্টার, হাশেম, মজিদ ও আজাদসহ আরো অনেকের বিরুদ্ধে ওই এলাকার আদিবাসী সাওতালদের জমি জবর দখল করে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

আদিবাসী সাওতালদের অভিযোগ তাদের বৈধ সম্পত্তি অবৈধ দখলে সহায়তা করতে যিনি সর্বদা মদদ দিয়ে যাচ্ছেন বা এ অবৈধ দখলের সাথে যিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত রয়েছেন তিনি হল ফুলাহারের রুস্তম গৌর চন্দ্র পাহাড়ী।

শ্রী কার্তিক মাল পাহাড়ী নামে এক আদিবাসী জানান, তারা এ এলাকায় সিএস, এসএ ও আরএস রেকর্ড মুলে ভুমির বৈধ মালিক হয়ে শতবছরের বেশি সময় ধরে ওই জমিতে ঘরবাড়ি নির্মানসহ ভোগ দখল করে আসছে। কিন্তু বেশ কিছু দিন যাবৎ উপরে উল্লেখিত ব্যক্তিরা মিলে বিভিন্ন সময়ে আমাদের উপর জোড়জুলুম ও অত্যাচারের ভয় দেখিয়ে আমাদের রেকর্ডভুক্ত অনেক বৈধ সম্পত্তি অবৈধ উপায়ে, ভূয়া কাগজ পত্র তৈরী করে জোড়পুর্বক জবর দখল করে ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের অবৈধ স্থাপনা তৈরী করছেন তারা।
তিনি বলেন, বর্তমানে স্থানীয় সাইফুল নামে এক ব্যক্তি আমার বৈধ জমি জবর দখল করে পাকা বাড়ি তৈরী করছে। বাড়ি তৈরীতে তাকে বাধা প্রদান করলে তিনি বলেন, আমার রেকর্ডভুক্ত এ জমি নাকি খাস খতিয়ান হয়ে গেছে। তারা সরকার থেকে লিজ এনে বাড়ি নির্মান করছে।
তিনি আরো বলেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন ৫বিঘা এবং আনোয়ার মাষ্টার ১৪ বিঘা তারা দুজনে মিলে আমার ১৯বিঘা সম্পত্তি জবর দখল করে নিয়েছে। এদিকে টিয়ার গায়ে আমার ১১বিঘা সম্পত্তি অবৈধ ভাবে ভূয়া কাগজ তৈরী করে মোঃ সোহরাব এর ছেলে রুস্তম দখল করে রেখেছে। ওই জমি উদ্ধার করতে গেলে আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানিসহ নানা অত্যাচার করে আসছে। এর একপর্যায়ে সে আমাকে ওই জমি লিখে দিতে নানা ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। যদি তাকে লিখে না দেই সে আমাকে ১২বছরের জেল খাটাবে বলেও হুমকি দিচ্ছে।
পরে বিষয়টির সমাধান চেয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ এলাকার গন্যমান্য অনেকের কাছে তিনি গিয়েছেন কিন্তু তারা কেউই বিষয়টির কোন সুরাহ করেননি বলে তার অভিযোগ। বর্তমানে ওইসব অবৈধ জবর দখলকারীদের জোড়জুলুম ও অত্যাচার ভয়ে ওখানকার আদিবাসী সাওতালরাসহ ওই এলাকার সাধারন দরিদ্র পরিবারগুলো সর্বদা আতংকের মধ্যে জীবন যাপন করছে বলে জানান তারা।
স্থানীয় গৌর চন্দ্র পাহাড়ী নামের এক ব্যক্তি জানান, এ উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে এখনো আমাদের প্রায় ২০হাজার সংখ্যালঘু সাওতাল পরিবারের বসবাস। বর্তমানে আমরা খুব একটা ভাল অবস্থার মধ্যে নেই। দিন দিন আমাদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর জোড়জুলুম ও বিভিন্ন ভাবে অত্যাচার করাসহ আমাদের জমিজমা অবৈধ ভাবে দখল করার প্রবনতা বেড়েই চলেছে। আমরা স্থানীয় বা আইনগত দিক থেকে তেমন কোন বিচার কিংবা সহযোগীতা পাচ্ছিনা। আমরা এই অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে মুক্তি পেতে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।
এব্যাপারে কাটাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ রফিক মিয়া জানান, আমার কাছে এখনো কেউ ভুমি জবরদখলের বিষয়ে কোন লিখিত ভাবে অভিযোগ দেয়নি। যদি কেউ এধরনের অভিযোগ করে বা দেয় আমি বিষয়টি আমলে নিয়ে তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করব।
এব্যাপারে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আব্দুর রাফিউল আলম জানান, আমি ওই এলাকায় সরকারী খাস জমিতে অবৈধভাবে এক ব্যক্তি পাকা বাড়ি নির্মান করছে এমন অভিযোগ পেয়েছি। এদিকে একটি পক্ষ বলছে তাদের রেকর্ডীয় সম্পত্তি জবরদখল করে ওই ব্যক্তি জোড়পূর্বক বাড়ি নির্মান করছে। পরে ভূমি অফিস থেকে আমাদের লোক পাঠিয়ে ওই বাড়ির নির্মান কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ প্রদান করেছি। এরমধ্যে উভয় পক্ষকে তাদের নিজ নিজ মালিকানার উপযুক্ত কাগজপত্র নিয়ে আসার জন্য বলা হয়েছে। তারা তাদের কাগজপত্র নিয়ে আসলে তা যাচাই বাচাই করে সঠিক সিন্ধ্যান্ত গ্রহন পূর্বক নির্দেশনা দেওয়া হবে। এর আগ পর্যন্ত ওই বাড়ির নির্মান কাজ বন্ধ থাকবে।

শেয়ার করুন