গাজীপুর প্রতিদিন ডেস্ক : টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের লক্ষ্য এখন তৃণমূলে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা। এ জন্য আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে এমপির স্বজনদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না। দীর্ঘ দিনের ত্যাগী, নিবেদিত ও পরীক্ষিতদের মূল্যায়ন করা হবে। এ ক্ষেত্রে গত সংসদ নির্বাচনে জনপ্রিয়তার জরিপে যারা এগিয়ে ছিলেন, কিন্তু মনোনয়ন পাননি, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হতে পারে। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, আগামী মার্চ থেকে কয়েক ধাপে উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। দলীয় প্রতীকে এই নির্বাচন হবে বলে দলের মনোনয়ন পেতে শুরু হয়েছে লবিং-তদবির। কেন্দ্রীয় নেতাদের ‘সুনজরে’ আসতে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এখন ঢাকায় দৌড়ঝাঁপ করছেন। বিশেষ করে গত সংসদ নির্বাচনে যারা শক্তিশালী প্রার্থী ছিলেন, কিন্তু মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন তাদের অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে নৌকা নিয়ে ভোট করার পরিকল্পনা করেছেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কয়েকটি মানদ-ের ভিত্তিতে দলের মনোনয়ন দেবে। এর মধ্যে প্রধানতম হচ্ছে, দলীয় এমপিদের আত্মীয়-স্বজনকে দলের মনোনয়ন না দেওয়া। দ্বিতীয়ত, কমপক্ষে এক যুগ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকতে হবে। তৃতীয়ত, তৃণমূলে সর্বস্তরের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা এবং দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হতে হবে। দলের প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়ে ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তৃণমূল আওয়ামী লীগে চিঠি পাঠিয়েছেন। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সপ্তাহে গণভবনে দলের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাই নিয়ে কথা বলেন। এ সময় তিনি দলের এমপির আত্মীয়-স্বজনদের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার পক্ষে মত দেন। দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা জানিয়েছেন, এক পরিবার থেকে এমপি-উপজেলা চেয়ারম্যান বা পৌর মেয়র থাকলে অন্যরা বঞ্চিত হন। আওয়ামী লীগ উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। আমাদের অনেক যোগ্য লোক আছে, যাদের মূল্যায়ন করা দরকার। সে কারণেই এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় এমপির স্বজনদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। তবে দু-চারটি ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে। কারণ সব মানদ-ে যদি এগিয়ে থাকেন, তার চেয়ে অধিক যোগ্য লোক না পাওয়া যায় এবং তৃণমূল থেকে আপত্তি না থাকে তাহলে মনোনয়নে বিবেচনায় রাখা হবে। তবে মাদকের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত এমন কাউকে কোনোভাবেই দলের মনোনয়ন দেওয়া হবে না।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেছেন, ‘আমরা প্রতিটি নির্বাচনেই অধিক যোগ্য ব্যক্তিকে দলের মনোনয়ন দিয়ে থাকি। এবার উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার মতো দলের নিবেদিত, যোগ্য ও ত্যাগীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। দলীয় এমপির স্বজনদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না।
দলের মনোনয়ন বোর্ডের আরেক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের এখন টার্গেট তৃণমূলে রাজনীতিতে ভারসাম্য আনা। সে কারণেই এমপির পরিবারের কাউকে এখন থেকে স্থানীয় সরকারের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। কারণ এমপি-উপজেলা চেয়ারম্যান কিংবা পৌর মেয়র এক পরিবারের হলে ‘পারিবারিক প্রভাব’ বিস্তারের মরিয়া হয়ে উঠতে পারে তারা। ফলে তৃণমূল নেতা-কর্মীর ওপর দলীয় নিপীড়ন-নির্যাতন বাড়বে। একই সঙ্গে অন্যরাও বঞ্চিত হবে।
সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী খুঁজে বের করতে দলের পক্ষ থেকে জরিপ চালানো হচ্ছে। তৃণমূল থেকেও নাম চাওয়া হয়েছে।