গাজীপুর প্রতিদিন ডেস্ক : রাষ্ট্রপতি ও চিফ স্কাউট মোঃ আব্দুল হামিদ বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করার মানসিকতা তৈরীতে স্কাউটিং এর ভুমিকা অনন্য। প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশকে আরোও সুন্দর করে গড়ে তুলতে স্কাউটরা রাখতে পারে অগ্রণী ভুমিকা। বিশেষ করে শিশু-কিশোর ও যুবদের মাদক, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকা, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ বিষবাম্প থেকে নিরাপদ এবং দুরে রাখতে স্কাউটিং ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে। স্কাউটিংই পারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আধুনিক, প্রগতিশীল, সৃজনশীল করে তুলতে।স্কাউটরা নিয়মিত সমাজসেবামুলক কাজের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও আর্তমানবতার সেবায় গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রেখে চলছে।
রাষ্ট্রপতি গতকাল রোববার বিকেলে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষন কেন্দ্রে বাংলাদেশ স্কাউটস আয়োজিত ১০ম বাংলাদেশ ও ৩য় সানসো স্কাউট জাম্বুরী উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওই সব কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি একজন স্কাউট লেখাপড়ায় যেমন ভাল, তেমনী সমাজে পরোপকারী ও স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে সকলের ¯েœহ ও ভালবাসা পাওয়ার অধিকারী। কঠোর পরিশ্রম ও অনুশীলনের মাধ্যমে ব্যক্কিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে স্কাউট আদর্শের প্রতিফলন ঘটাবে এবং দেশের যেকোন প্রয়োজনে একজন প্রকৃত দেশ প্রেমিক ও স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আতœেিনয়োগ করবে। নিরক্ষরতা, দারিদ্র, ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গঠনে রাখতে হবে বলিষ্ট ভুমিকা। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে ২০২১সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্ন্ত দেশে পরিনত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ স্কাউটসের ব্যতিক্রমধর্মী কার্যক্রম আমাকে মুগ্ধ করেছে। সম্প্রতি চকবাজারে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে উদ্ধার কাজ এবং দেশব্যাপী সড়ক নিরাপওা ও ট্রাফিক শৃখংলা রক্ষায় সহয়তা করে বাংলাদেশ স্কাউটস উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর পুর্তিতে বাংলাদেশ স্কাউটসের সদস্য সংখ্যা ২১লক্ষে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারন করা হয়েছে। একই সাথে ২০২১সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে ৩২তম এপিআর স্কাউট জাম্বুরী। সদস্য সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ বিশ্ব স্কাউট সংস্থা টপফাইভ কান্ট্রি অ্যাওয়ার্ড এবং এপিআর সাসটেনেবল গ্রোথ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করায় আমি স্কাউ সদস্যদের ধন্যবাদ জানাই।
রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ মনোরম গজারী বেষ্টিত মৌচাক স্কাউটস প্রশিক্ষন কেন্দ্র রোববার বেলা ৪টা ১৫মিনিটে কেন্দ্রের সভাস্থলে পৌছালে তাঁকে স্কাউটস কর্মকর্তারা তাকে অভ্যর্থনা জানান। রাষ্ট্রপতিকে ব্যাজ, টুপি ও ওয়াগন পড়িয়ে দেওয়া হয়। এ সময় রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে স্কাউট হাসানুল হক জাম্বুরী পতাকা গ্রহন করেন। এ সময় স্বাগত বক্তব্য দেন জাম্বুরীর সাংগঠনিক সভাপতি আকতারুজ্জামান খান কবীর, বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রধান জাতীয় কমিশনার ড.মোঃ মোজাম্মেল হক খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ স্কাউটসের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ। পরে রাষ্ট্রপতি দুজন বিদেশী স্কাউটকে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন। এ সময় রাষ্টপতি জাম্বুরী স্বারক ও ডাকটিকেট অবমুক্ত করেন। এ সময় ডাক বিভাগের সচীব ও মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন। পরে রাষ্ট্রপতি জাম্বুরী এলাকায় বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন। তিনি স্কাউটদের ডিসপ্লে ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।।
এবারের জাম্বুরীতে দেশের সকল জেলা ও উপজেলা থেকে ১০২২টি স্কাউট দলের ১০হাজার ৯৮ জন স্কাউট ও গার্ল ইন স্কাউট অংশ গ্রহণ করেছে। এছাড়া ভারত থেকে ২২১,নেপাল ৯৬,ভুটান ৮,মালদ্বীপ ২৩, শ্রীলংকা ৭, আফগানিস্তান ২,ব্রুনাই ১,আমেরিকায় ২ ও ইংল্যান্ড থেকে ১জন স্কাউট ও কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা ও স্বেচ্ছাসেবকসহ ১১ হাজারের অধিক স্কাউট ও কর্মকতা অংশগ্রহণ করছেন।
১৯৭৮ সাল থেকে শুরু হয়ে প্রতি ৪বছর অন্তর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে জাতীয় স্কাউট জাম্বুরী। সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠিত এ জাম্বুরীতে মোট ১৪টি ভেঞ্চার ও কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানের সমন্বয়ে আকর্ষনীয় উদ্দীপনামুলক,শিক্ষনীয় ও প্রতিযোগীতামূলক প্রোগ্রাম সাজানো হয়েছে যা ভিলেজ সাব ক্যাম্প ও কেন্দ্রীয়ভাবে বাস্তবায়িত হবে। বাঙ্গালীর জাতির পিতাকে নতুন প্রজন্মের নিকট পরিচিত করার জন্য জাম্বুরীর মূল এরিনার নাম করণ করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। জাম্বুরীর যে ৪টি ভিলেজ রয়েছে সেগুলোর নাম করন করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট ৪ জন সহচরদের নামে। এ ছাড়াও ৪টি ভিলেজের অধীনে ১২টি সাব ক্যাম্প কবি,সাহিত্যিক ও বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের নামে নামকরন করা হয়েছে।
১৪ মার্চ রাতে শেষ হবে ১১ বছর থেকে ১৭ বছর বয়সী স্কুল,কলেজের ছেলে মেয়েদের এ মিলন মেলা।