গাজীপুর প্রতিদিন ডেস্ক : ’কাবিং করবো, শান্তির বার্তা আনবো’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মৌচাক, কালিয়াকৈর, গাজীপুরে ১৯ জানুয়ারি, ২০২০ থেকে শুরু হওয়া ৯ম জাতীয় কাব ক্যাম্পুরী আজ ২৪ জানুয়ারি মহা তাঁবুজলসা ও সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হলো। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মহা তাঁবুজলসা এবং সমাপনী অনুষ্ঠানে মাননীয় মন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় জাহিদ মালেক, এমপি, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান, প্রধান জাতীয় কমিশনার, বাংলাদেশ স্কাউটস ও মাননীয় কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশন এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোঃ আকরাম আল হোসেন, সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী কাব স্কাউটরা স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দে দলীয় ও নিজস্ব ধ্যান ধারণায় চিত্তবিনোদনের জন্য তাদের উপস্থাপনা পরিবেশন করে।
সকালে ক্যাম্পুরীর সফলতা নিয়ে ক্যাম্পুরী মিডিয়া সেন্টার সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে। সাংবাদিক সম্মেলনে কালিয়াকৈর ও গাজীপুর প্রেসক্লাবের সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন। ক্যাম্পুরী আয়োজকদের পক্ষে সাংবাদিক সম্মেলনে ক্যাম্পুরী সম্পর্কিত তথ্য প্রদান করেন মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম খান, ডেপুটি ক্যাম্পুরী চীফ (ওভারসীস পার্টিসিপেন্ট), মোঃ মাহমুদুল হক, ডেপুটি ক্যাম্পুরী চীফ (পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা), ফেরদৌস আহমেদ, ডেপুটি ক্যাম্পুরী চীফ (সাইট অপারেশন ব্যবস্থাপনা), মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান রিপন, ডেপুটি ক্যাম্পুরী চীফ (প্রোগ্রাম), সালাহউদ দীন আহমেদ, সমন্বয়কারী, মিডিয়া সেন্টার, মোঃ শাফাযেতুল ইসলাম খান, সদস্য, মিডিয়া সেন্টার, মীর মোহাম্মদ ফারুক, যুগ্ম সমন্বয়কারী, মিডিয়া সেন্টার, খান মোঃ পীর এ আযম (আকমল), যুগ্ম সমন্বয়কারী, পরিবহন ও যোগাযোগ, মশিউর রহমান, প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী, আমির সাদ বিন শামস, প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী।
আজ সকাল থেকে কুয়াকাটা ভিলেজের কাব স্কাউটরা এসডিভি (সাসটেইনবল ডেভেলপমেন্ট ভিলেজ)-এ অংশগ্রহণ করে এসডিজি’র ১৭ টি গোল সম্পর্কে সাধারণ ধারণা পায়। পাশাপাশি কাব স্কাউটরা এই স্বপ্নে নিজ দেশের ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ, জলবায়ু, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, তথ্য প্রযুক্তি ও মুক্তিযুদ্ধসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করে। গ্রামীণ ঐতিহ্যের বায়োস্কোপ, নাগরদোলা, পুতুল নাচ দেখে ও চড়ে নির্মল আনন্দ লাভ করে।
সুন্দরবন ভিলেজের কাব স্কাউটরা আকর্ষণীয় ফান ফ্যাক্টরিতে অংশগ্রহণ করে। এখানে তৈজসপত্র তৈরি দেখে শেখে, মাটির মডেল তৈরি, বাই সাইকেল মেরামত, পাযল মেলানো, দোভাষী, ক্যানভাসে নিজের ইচ্ছামত চিত্র অংকন করে, দড়ির কাজ ও হস্তলিপির কাজ করে।
কক্সবাজার ভিলেজের অংশগ্রহণকারী কাব স্কাউটরা অজানাকে জানার, দেখার, রোমাঞ্চকর ও আকর্ষণীয় এক অভিযাত্রা যা কাবদের কাছে “কাব অভিযান” হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। এবারের কাব অভিযানে কাবদের “ঞযব ঔঁহমষব ইড়ড়শ” এর আদলে বিশেষভাবে প্রস্তুত করা একটি স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। অজানা পথে ট্রেইলের সাহায্যে কাব স্কাউটরা তাদের ঠিকানা খুজে পায়।
শ্রীমঙ্গল ভিলেজের কাব স্কাউটরা আর্কষণীয় বৈচিত্রময় ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর স্থান ফ্যানটাসি কিংডম ভ্রমণে যায়। অংশগ্রহণকারীরা ফ্যান্টাসির বিভিন্ন রাইড দেখে এবং তাদের পছন্দের রাইডে চড়ে আনন্দ লাভ করে। বিশেষ করে ঢাকার বাহিরের অনেক ছেলে-মেয়ে তাদের জীবনে এই প্রথম ফ্যান্টাসি দেখার এবং রাইড চড়ার অভিজ্ঞতা লাভ করলো।
এছাড়াও সুন্দরবন ও কুয়াকাটা ভিলেজের কাব স্কাউটরা গতকাল ২৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বন্ধু গড়ি স্বপ্নে অংশগ্রহণ করে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে কাব স্কাউটরা একে অপরের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি, পারস্পরিক পরিচয় ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ পায়। এই স্বপ্নে একটি কাবদলকে ছয়টি গ্রুপের ০৬টি ছবি দেয়া হয়। গ্রুপগুলি হলো, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, জেব্রা, নেকড়ে, হরিণ, জিরাফ অথবা টিয়া, ময়না, দোয়েল, কোয়েল, বক, শালিক। বন্ধুত্ব তৈরির জন্য প্রত্যেক কাব সদস্য তার প্রাপ্ত ছবি উল্লেখিত গ্রুপের মধ্যে কোন গ্রুপের ছবি তা নির্ধারণ করে সে গ্রুপের অপরাপর ছবি প্রাপ্ত কাব স্কাউটদের খুঁজে গ্রুপ তৈরি করে বন্ধুত্ব তৈরি করে। ০৬ জনের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরির পর ছবির পেছনে ও ক্যাম্পুরী গাইড বইয়ে ছয়জন বন্ধুর নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর/মোবাইল নম্বর লিখে বন্ধুত্বের স্মৃতি ধরে রাখার সুযোগ পায়।
বিকেল ৪.০০ টায় এসডিভি’র সমাপনী অনুষ্ঠানে মাননীয় উপমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয় জনাব মহিবুল হাসান চৌধুরী, এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, ’কাবিং করবো, শান্তির বার্তা আনবো’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মৌচাক, কালিয়াকৈর, গাজীপুরে ১৯ জানুয়ারি, ২০২০ থেকে ৯ম জাতীয় কাব ক্যাম্পুরী অনুষ্ঠিত শুরু হয়। কাব স্কাউটদের এই বৃহত্তম মিলনমেলায় সারদেশ থেকে আসা ৮৮৮টি প্রতিষ্ঠানের ৫,৩২৮ জন কাব স্কাউট, ৮৮৮ জন কাব স্কাউট লিডার, ৫৪৩ জন কর্মকর্তা, ৫১৯ জন স্বেচ্ছাসেবক রোভার স্কাউট, ৭৯জন সাপোর্ট স্টাফ, ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, আনসার, বাবুর্চিসহ প্রায় ৯ হাজার অংশগ্রহণকারী এই ক্যাম্পুরীতে যোগ দেন। এছাড়াও ক্যাম্পুরীতে অভিভাবক দিবস, টপ অ্যাচিভার্স ও উডব্যাজ রিইউনিয়নে স্কাউটার, রোভার স্কাউট, স্কাউট, কাব স্কাউট ও স্কাউট শুভানুধ্যায়ী অংশগ্রহণ করেন।
ক্যাম্পুরীর চীফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান, প্রধান জাতীয় কমিশনার, বাংলাদেশ স্কাউটস ও মাননীয় কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মোঃ আলমগীর, সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ক্যাম্পুরী স্কাউট কর্মকর্তা, স্বেচ্ছাসেবক রোভার স্কাউট ও সহায়তাকারীগণ ১৮ জানুয়ারি, ২০২০ তারিখে ক্যাম্পুরী ময়দানে পৌঁছান। অংশগ্রহণকারীরা তাঁবুতে অবস্থান ক’রে ক্যাম্পুরী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। সকলকে কেন্দ্রীয়ভাবে রান্না করা খাদ্য সরবরাহ করা হয়।
২০ জানুয়ারি, ২০২০ তারিখ, সোমবার, বেলা ৩.০০টায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চীফ স্কাউট মোঃ আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসেবে ৯ম জাতীয় কাব ক্যাম্পুরী উদ্বোধন করেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মাননীয় মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ.ক.ম মোজাম্মেল হক, এম পি বিশেষ অতিথি হিসেবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ স্কাউটসের সভাপতি জনাব মোঃ আবুল কালাম আজাদ। অনুষ্ঠানে ক্যাম্পুরী চীফের বক্তব্য দেন ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান, প্রধান জাতীয় কমিশনার, বাংলাদেশ স্কাউটস। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জনাব মোঃ আলমগীর, সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ২০১৮ সালে অর্জনকারী ৭০৩জন স্কাউটের মাঝে ‘প্রেসিডেন্ট’স স্কাউট অ্যাওয়ার্ড’ এবং ১২জন রোভার স্কাউটের মাঝে ‘প্রেসিডেন্ট’স রোভার স্কাউট অ্যাওয়ার্ড’ বিতরণ করা হয়। ক্যাম্পুরীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করে।
১৮ জানুয়ারি শুরুতে স্বেচ্ছাসেবক রোভার স্কাউটদের এবং পরে কর্মকর্তাদের ওরিয়েন্টেশনের আয়োজন করা হয়। এই ক্যাম্পুরীতে দায়িত্ব বন্টন ও পালন বিষয়ে আলোচনা করা হয়। ১৯ তারিখে ক্যাম্পুরীর বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকগণকে অবহিত করার জন্য সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
২০ জানুয়ারি মৌচাক স্কাউট স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে স্থাপিত এসডিভি (সাসটেইনবল ডেভেলপমেন্ট ভিলেজ) -এর উদ্বোধন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে এটি উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মাননীয় মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ.ক.ম মোজাম্মেল হক, এম পি।
এবারের ক্যাম্পুরীকে সম্পূর্ণ পলিথিনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। পুরো ক্যাম্প এলাকা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য বাংলাদেশ স্কাউটসের সভাপতি মোঃ আবুল কালাম আজাদ এর নেতৃত্বে তাঁর নির্দেশনা ও পরামর্শ অনুসারে কয়েকটি টিম কাজ করে।
অংশগ্রহণকারী কাব স্কাউটরা ১২টি আকর্ষণীয়, উপভোগ্য, আনন্দদায়ক, শিক্ষণীয় ও উদ্দীপনামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। এই ১২টি কার্যক্রম স্বপ্ন নামে অভিহিত। স্বপ্নগুলো হ’লো:স্বপ্ন-১: অরুণিমা, স্বপ্ন-২: তাঁবুকলা, স্বপ্ন-৩ : কাব কার্নিভাল, স্বপ্ন-৪: ছুটির আনন্দ, স্বপ্ন-৫ : কাব অভিযান, স্বপ্ন-৬ : ফান ফ্যাক্টরি, স্বপ্ন-৭: অন্যরকম বিজ্ঞান, স্বপ্ন-৮ : এসডিভি (সাসটেইনবল ডেভেলপমেন্ট ভিলেজ), স্বপ্ন-৯ : ফান অ্যান্ড গেইম, স্বপ্ন-১০:বন্ধু গড়ি, স্বপ্ন-১১ : জানা অজানা, স্বপ্ন্ন্ন-১২ : ক্যাম্পফায়ার। এছাড়াও কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানাদির মধ্যে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, ভিলেজভিত্তিক তাঁবুজলসা, টপ অ্যাচিভার্স রিইউনিয়ন, অভিভাবক দিবস, উডব্যাজ রিইউনিয়ন। এসকল অনুষ্ঠানে কাব স্কাউটদের উৎসাহ প্রদানের জন্য এম এ মান্নান, এমপি, মাননীয় মন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান, এমপি, প্রতিমন্ত্রী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, নসরুল হামিদ, এমপি, মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, বিদ্যুৎ, জালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সিমিন হোসেন রিমি, এমপি, ড. শাহ মোহাম্মদ ফরিদ, সাবেক মুখ্য সচিব, মুহ. ফজলুর রহমান, সাবেক প্রধান জাতীয় কমিশনার, মোঃ আবদুল করিম, সাবেক মুখ্য সচিব, মোঃ আবুল কালাম আজাদ, সভাপতি, বাংলাদেশ স্কাউটস, হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, সাবেক সিনিয়র সচিব, শাহজাহান আলী মোল্লা, সদস্য, পিএসসি, মোঃ মাহবুব হোসেন, সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, মোহাম্মদ দিলোয়ার বখত, সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশন উপস্থিত ছিলেন।